জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ ধারণ করতে চলেছে ইতোমধ্যে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর এবার বাস্তবিকই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরসহ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দিয়েছে ভারত। জবাবে পাল্টা হামলা চালানো শুরু করেছে পাকিস্তানও।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যুদ্ধের মতো এমন চূড়ান্ত পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হওয়ার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে দুপক্ষকেই শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্বনেতারা। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদসহ আজাদ কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্পটে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন; পাশাপাশি আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। ভারতের এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ উল্লেখ করে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।পাকিস্তানে ভারতের এ হামলা ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এটা লজ্জাজনক। এইমাত্র এ সম্পর্কে শুনলাম। আমার মনে হয় অতীতের কিছু ঘটনার উপর ভিত্তি করে মানুষ জানত যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। তারা বহু, বহু দশক ধরে লড়াই করে আসছে। আশা করি, এটি খুব দ্রুত শেষ হবে।
যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। আশা করি, এটি দ্রুত শেষ হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারতীয় ও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় সামরিক অভিযান নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব। উভয় দেশকেই সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সামরিক সংঘাত বিশ্ব বহন করতে পারে না।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানে ভারতের সামরিক অভিযানকে দুঃখজনক বলে মনে করছে চীন। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন আমরা। আমরা উভয় পক্ষকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করার, শান্ত থাকার, সংযম প্রদর্শনের এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে, এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের দেশ তীব্র নিন্দা জানায়। একইসঙ্গে আমাদের উদ্বেগ, পরিস্থিতি আরও প্রতিশোধমূলক বিনিময়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।
এছাড়া ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে দেশটিতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার বলেছেন, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরায়েল। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত যে নিরপরাধদের বিরুদ্ধে তাদের জঘন্য অপরাধ থেকে লুকানোর কোনও জায়গা নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে যা এখন। বুধবার (৭ মে) সকালে এক ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ইতোমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।একইদিন সকালে আরেক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।এর আগে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে হামলার পর ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের ৯টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। তবে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে নিশানা বানানো হয়নি এ অভিযানে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন